সোনালীর বয়স তিন বছর। আজ তার মনটা খুব খারাপ। মায়ের সঙ্গে কথা বলছে না। মা
কার্টুন দেখতে দেয়নি বলে রেগে টিভি রিমোট ভেঙে ফেলেছে সোনালী। এ জন্য মা
খুব রাগারাগি করেছেন। এরই মধ্যে সোনালী বাবাকে ফোন করে জানিয়েছে, মা আদর
করছে না, খুব বকাবকি করেছে। সারাদিনে সে ঠিকমতো খায়নি, মাও জেদ করে তাকে
কিছুটা এড়িয়ে চলছে। মায়ের যুক্তি হলো- ছোটবেলায় আমরা কখনো বড়দের কথার
অবাধ্য হয়নি, মা-বাবা যা বলেছে তাই শুনেছি। কিন্তু সোনালীর এত ছোট বয়সেই
মায়ের কথা শুনবে না কেন, এত জেদ কেন ইত্যাদি? ওর শাস্তি পাওয়া দরকার। মাকে
বুঝতে হবে, সব শিশু সমান নয়, কেউ শান্ত প্রকৃতির আবার কেউ জেদী হতে পারে।
মায়ের এহেন আচরণ শিশুর জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। শিশুরা নির্মল
সৌন্দর্যের প্রতীক। মায়ের কোল আলো করে একটি শিশু পৃথিবীতে আসে। সে দেখে তার
নতুন পৃথিবী।
তাকে নিয়ে মায়ের চোখে থাকে এক অনাগত স্বপ্ন। তার সন্তান একদিন অনেক বড় হবে, মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। একটি শিশুকে প্রকৃত অর্থে বড় করে তুলতে গেলে চাই শাসন ও সোহাগের সংমিশ্রণ। এর যে কোনো একটির ঘাটতি কিংবা আধিক্যই শিশুর জন্য মারাত্মক হতে পারে। দুরন্ত ও অতিরিক্ত জেদী শিশুকে শান্ত করতে অনেক মা-বাবা বকাঝকার সঙ্গে মারধরও করেন। আবার অতি আদরে কখনো শিশু হয়ে ওঠে জেদী ও একগুঁয়ে। অতিরিক্ত শাসন, বাঁধনছাড়া আদর ও প্রশ্রয় শিশুর পক্ষে যেমন ভালো নয়, তেমনি যখন তখন ভয় দেখানো বা বকাঝকা করাও শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের শাসন করা উচিত নয়। এ সময় তাদের সঙ্গে সমঝোতার মনোভাব নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। শিশুদের সঙ্গে উঁচু গলায় কথা বলা বা জোরে ধমকানো একেবারে অনুচিত। হঠাৎ জোরে ধমক দিলে শিশুরা চমকে ওঠে। এতে করে শিশুর রি-একটিভ সাইকোসিস হতে পারে। বাবা-মা অনেক সময় মিথ্যা ভূতের ভয় কিংবা পুলিশের ভয় দেখিয়ে শিশুকে কোনো কাজ করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। প্রথমে শিশুরা যখন রূপকথার গল্প শোনে, সে বয়সে শিশুদের নানি-দাদিরা পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় গল্প, পরীর গল্প, ডাইনি-রাক্ষসের কাহিনী শুনিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্ট করেন। এ গল্প, কাহিনী বড়দের কাছে আবাস্তব, কাল্পনিক হলেও শিশুর কাছে সত্যি মনে হতে পারে, তার মনোজগতে প্রভাব ফেলে। তাই মনের অজান্তেই শিশু অনেক সময় অলীক কল্পনার কথা বলে থাকে। তার আজব কল্পনাকে হেসে বা ঠাট্টা করে থামিয়ে দেয়া উচিত নয়। থামিয়ে দিলে লজ্জায় হয়ত আর সহজ-সরল সঙ্গী হিসেবে নিতে পারবে না আমাদের। বড়দের সে এড়িয়ে যাবে, মনে করবে তারা তাকে বিদ্রƒপ করছে। শিশু চায় বিশ্বাস আর স্নেহ। বড়দের কাছে যদি সে স্নেহ, নির্ভরতা আর নিশ্চয়তা পায়, তাহলে নিজ থেকেই তার মধ্যে পরিবর্তন আসবে। তবে অন্ধ স্নেহ নয়, হতে হবে সেই স্নেহ, যা থেকে শিশু আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার প্রেরণা পাবে। শিশুরা একটা বয়সে মিথ্যা বলে, অযথা অহঙ্কার প্রদর্শন করে। বাড়ি-গাড়ির গল্প শুনিয়ে বন্ধু মহলে চমক লাগিয়ে দিতে চায়। বন্ধুবান্ধবের দৃষ্টিতে নিজেকে বড় একটা কিছু প্রমাণ করতে দুয়েকটি মিথ্যার আশ্রয় নেয়। এ ব্যাপারে অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোনো অপ্রাপ্যতা থেকে অথবা পরিবারের বড়দের মধ্যে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার প্রবণতা থেকে শিশুরা অনুপ্রাণিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে মনের ভেতর কোনো এক অজানা ভয় থেকেও মিথ্যার জন্ম হয়। শিশুর সবকিছু ইতিবাচকভাবে মোকাবিলা করতে মা-বাবার স্নেহ ও ধৈর্যের বড়ই প্রয়োজন। শিশুরা যেন বুঝতে পারে মা-বাবা তার অভিভাবকই নয়, ভালো বন্ধুও। কারণ তার মনোজগত সম্পর্কে মা-বাবার থেকে কেউ ভালো বোঝে না। অনেক ক্ষেত্রে স্বস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যও শিশুরা মিথ্যা বলে। বিনা অনুমতিতে কোনো কাজ করে ফেলেছে, শাস্তি থেকে মুক্তির জন্য চটজলদি মিথ্যা বলে দিল। তখন বাবা-মা তার এই অস্বীকার নিয়ে যদি অযথা টানাহেঁচড়া করে শাসনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন, তবে ভবিষ্যতে হয়ত আরো সাবধানে এসব ব্যাপার গোপন করবে অথবা অগ্রাহ্য করতে শিখবে। অবশ্য কখনো কখনো শিশুরা ভুলে গিয়েও দুয়েকটা মিথ্যা বলে। এটাকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে যুক্তি দিয়ে শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে, মিথ্যা বলা ঠিক নয়। কারণ কোনো শিশুই বাবা-মা, প্রিয়জনের ভালোবাসা, আদর, স্নেহ হারাতে চায় না। আসলে শিশুর নেতিবাচক যে কোনো আচরণই প্রিয়জনের আদর ও স্নেহ দ্বারা পরিবর্তন সম্ভব।
মনোস্তত্ত্ববিদদের মতে, কোন শিশুর বয়স তিন বছর হওয়ার আগেই তার মস্তিষ্কের কোষগুলোর সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। শিশুর চিন্তা-ভাবনা ও কথা বলার, শেখার ও বিচার-বিবেচনার সামর্থ্য তৈরি হয়ে ওঠে যা প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই তাদের মূল্যবোধ ও সামাজিক আচরণের ভিত্তি গড়ে তোলে। আমাদের সমাজ হচ্ছে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমুখী, ধাবমান। সব সময় আমরা বিজয়ী হওয়ার জন্য শিশুকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকি। যে শিশু নতুন কিছু শিখছে, নতুন দক্ষতা অর্জন করছে তার ভেতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে প্রতিনিয়তই। আনন্দ প্রাপ্তির চেয়ে বিজয় মুকুট ছিনিয়ে আনার দাবি প্রয়োগ করলে শিশুর স্বাভাবিক মনের বিকাশ স্বতঃস্ফূর্ত হবে না বরং বাধাগ্রস্ত হবে। মনে রাখতে হবে, নিজস্ব সাবলীল বেগবান ধারার মাধ্যমেই শিশু দক্ষতা অর্জন করবে এবং বিজয় ছিনিয়ে আনবে।
তাকে নিয়ে মায়ের চোখে থাকে এক অনাগত স্বপ্ন। তার সন্তান একদিন অনেক বড় হবে, মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। একটি শিশুকে প্রকৃত অর্থে বড় করে তুলতে গেলে চাই শাসন ও সোহাগের সংমিশ্রণ। এর যে কোনো একটির ঘাটতি কিংবা আধিক্যই শিশুর জন্য মারাত্মক হতে পারে। দুরন্ত ও অতিরিক্ত জেদী শিশুকে শান্ত করতে অনেক মা-বাবা বকাঝকার সঙ্গে মারধরও করেন। আবার অতি আদরে কখনো শিশু হয়ে ওঠে জেদী ও একগুঁয়ে। অতিরিক্ত শাসন, বাঁধনছাড়া আদর ও প্রশ্রয় শিশুর পক্ষে যেমন ভালো নয়, তেমনি যখন তখন ভয় দেখানো বা বকাঝকা করাও শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের শাসন করা উচিত নয়। এ সময় তাদের সঙ্গে সমঝোতার মনোভাব নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। শিশুদের সঙ্গে উঁচু গলায় কথা বলা বা জোরে ধমকানো একেবারে অনুচিত। হঠাৎ জোরে ধমক দিলে শিশুরা চমকে ওঠে। এতে করে শিশুর রি-একটিভ সাইকোসিস হতে পারে। বাবা-মা অনেক সময় মিথ্যা ভূতের ভয় কিংবা পুলিশের ভয় দেখিয়ে শিশুকে কোনো কাজ করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। প্রথমে শিশুরা যখন রূপকথার গল্প শোনে, সে বয়সে শিশুদের নানি-দাদিরা পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় গল্প, পরীর গল্প, ডাইনি-রাক্ষসের কাহিনী শুনিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্ট করেন। এ গল্প, কাহিনী বড়দের কাছে আবাস্তব, কাল্পনিক হলেও শিশুর কাছে সত্যি মনে হতে পারে, তার মনোজগতে প্রভাব ফেলে। তাই মনের অজান্তেই শিশু অনেক সময় অলীক কল্পনার কথা বলে থাকে। তার আজব কল্পনাকে হেসে বা ঠাট্টা করে থামিয়ে দেয়া উচিত নয়। থামিয়ে দিলে লজ্জায় হয়ত আর সহজ-সরল সঙ্গী হিসেবে নিতে পারবে না আমাদের। বড়দের সে এড়িয়ে যাবে, মনে করবে তারা তাকে বিদ্রƒপ করছে। শিশু চায় বিশ্বাস আর স্নেহ। বড়দের কাছে যদি সে স্নেহ, নির্ভরতা আর নিশ্চয়তা পায়, তাহলে নিজ থেকেই তার মধ্যে পরিবর্তন আসবে। তবে অন্ধ স্নেহ নয়, হতে হবে সেই স্নেহ, যা থেকে শিশু আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার প্রেরণা পাবে। শিশুরা একটা বয়সে মিথ্যা বলে, অযথা অহঙ্কার প্রদর্শন করে। বাড়ি-গাড়ির গল্প শুনিয়ে বন্ধু মহলে চমক লাগিয়ে দিতে চায়। বন্ধুবান্ধবের দৃষ্টিতে নিজেকে বড় একটা কিছু প্রমাণ করতে দুয়েকটি মিথ্যার আশ্রয় নেয়। এ ব্যাপারে অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোনো অপ্রাপ্যতা থেকে অথবা পরিবারের বড়দের মধ্যে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার প্রবণতা থেকে শিশুরা অনুপ্রাণিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে মনের ভেতর কোনো এক অজানা ভয় থেকেও মিথ্যার জন্ম হয়। শিশুর সবকিছু ইতিবাচকভাবে মোকাবিলা করতে মা-বাবার স্নেহ ও ধৈর্যের বড়ই প্রয়োজন। শিশুরা যেন বুঝতে পারে মা-বাবা তার অভিভাবকই নয়, ভালো বন্ধুও। কারণ তার মনোজগত সম্পর্কে মা-বাবার থেকে কেউ ভালো বোঝে না। অনেক ক্ষেত্রে স্বস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যও শিশুরা মিথ্যা বলে। বিনা অনুমতিতে কোনো কাজ করে ফেলেছে, শাস্তি থেকে মুক্তির জন্য চটজলদি মিথ্যা বলে দিল। তখন বাবা-মা তার এই অস্বীকার নিয়ে যদি অযথা টানাহেঁচড়া করে শাসনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন, তবে ভবিষ্যতে হয়ত আরো সাবধানে এসব ব্যাপার গোপন করবে অথবা অগ্রাহ্য করতে শিখবে। অবশ্য কখনো কখনো শিশুরা ভুলে গিয়েও দুয়েকটা মিথ্যা বলে। এটাকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে যুক্তি দিয়ে শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে, মিথ্যা বলা ঠিক নয়। কারণ কোনো শিশুই বাবা-মা, প্রিয়জনের ভালোবাসা, আদর, স্নেহ হারাতে চায় না। আসলে শিশুর নেতিবাচক যে কোনো আচরণই প্রিয়জনের আদর ও স্নেহ দ্বারা পরিবর্তন সম্ভব।
মনোস্তত্ত্ববিদদের মতে, কোন শিশুর বয়স তিন বছর হওয়ার আগেই তার মস্তিষ্কের কোষগুলোর সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। শিশুর চিন্তা-ভাবনা ও কথা বলার, শেখার ও বিচার-বিবেচনার সামর্থ্য তৈরি হয়ে ওঠে যা প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই তাদের মূল্যবোধ ও সামাজিক আচরণের ভিত্তি গড়ে তোলে। আমাদের সমাজ হচ্ছে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমুখী, ধাবমান। সব সময় আমরা বিজয়ী হওয়ার জন্য শিশুকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকি। যে শিশু নতুন কিছু শিখছে, নতুন দক্ষতা অর্জন করছে তার ভেতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে প্রতিনিয়তই। আনন্দ প্রাপ্তির চেয়ে বিজয় মুকুট ছিনিয়ে আনার দাবি প্রয়োগ করলে শিশুর স্বাভাবিক মনের বিকাশ স্বতঃস্ফূর্ত হবে না বরং বাধাগ্রস্ত হবে। মনে রাখতে হবে, নিজস্ব সাবলীল বেগবান ধারার মাধ্যমেই শিশু দক্ষতা অর্জন করবে এবং বিজয় ছিনিয়ে আনবে।
No comments:
Post a Comment