♦
♦
♦বাচ্চাদের মধ্যে সালাতের অভ্যাস করবেন কিভাবে???
♦
♦
♦
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রসুলিহিল কারীম।
" আমার বাচ্চা নামায পড়তে চায়না"
" বাচ্চাকে নিয়ে খুব টেনশন এ আছি ভাই/ ভাবি,ও একদম ই নামায পরতে চায়না"
এই অভিযোগ গুলো আমরা পিতামাতার কাছ থেকে প্রায় ই শুনে থাকি।
বাচ্চাদের মধ্যে সালাত ( নামায)পড়ার অভ্যাস করাতে অনেক বাবা মা ই হিমশিম
খান। অনেকে জোর করে বাচ্চাকে দিয়ে সালাত পড়াতে চেষ্টা করেন। ফলাফল হল
বাচ্চা কিছুদিন নামায পরলেও পরবর্তীতে সালাতের প্রতি তার মনে খুব বিরক্তি
তৈরি হয় যা তার পরকাল ধ্বংস করার জন্যে যথেষ্ট হয়ে যায়।
অনেকেই ভাবেন কিভাবে বাচ্চাদের মধ্যে সালাত পড়ার অভ্যাস তৈরি করা যায়?? তাদের জন্যে নিচের টিপস গুলো কার্যকরী হবে ইন শা আল্লাহ।
♦আল্লাহর কাছে অনেক অনেক দুয়া করা ও সাহায্য চাওয়া।
♦
বাচ্চারা দেখার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি শেখে তাই বাচ্চাদের মধ্যে সালাতের
অভ্যাস করতে চাইলে পিতা মাতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নিয়মিত আউয়াল
ওয়াক্ত এ নামায পড়ার অভ্যাস পরিবারে চালু রাখতে হবে। বাচ্চা যেন তার
পরিবারের সদস্যদেরকে নামাযের ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নশীল দেখতে পারে এই
ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে হবে পিতামাতার।ভালো হয় বাচ্চা হবার পর থেকে ৫
ওয়াক্ত নামাযের সময় তাকে নামায পড়ার জায়গার আশেপাশে শুইয়ে দেয়া। তাহলে
জন্মের পর থেকেই অবচেতন মনে বাচ্চার মধ্যে সালাতের প্রতি টান ও ভালোবাসা
তৈরি হবে ইন শা আল্লাহ।
♦নামাযের
সময় হবার ৩০-৪৫ মিনিট আগে থেকেই বাচ্চাকে রিমাইন্ডার দেয়াটা বেশ ইফেক্টিভ
হতে পারে। যেমন: মা বাচ্চাকে নামাযের ৪৫ মিনিট আগে থেকেই এমন রিমাইন্ডার
দিতে পারেন যে "বাবা/ মামনি আর যোহর নামাযের ৪৫ মিনিট বাকি আছে। এখন আমরা
সুন্দরভাবে গোসল করব, খাব আর নামাযের জন্যে রেডি হব। তুমি কি তোমার সালাত
ড্রেস আর জায়নামাজ রেডি রেখেছ বাবা/ মামনি??চল আমরা নামাযের জন্যে তৈরি হয়ে
নেই। আমরা নামাযে আল্লাহর সাথে কথা বলব ইন শা আল্লাহ।"
♦বাচ্চা
নামায পড়তে না চাইলে বাচ্চাকে জোর না করা।তাকে ধৈর্যের সাথে বুঝানো, উত্তম
স্বরে তার সাথে কথা বলা। আমরা পিতামাতারা যে ভুলটা প্রায়ই করে থাকি সেটা
হল আমরা ধরেই নেই যে ' আমি বাচ্চাকে নামায পড়তে বলেছি তাই ওকে নামায পড়তেই
হবে'। কিন্তু এটা আমরা ভুলে যাই যে এতদিনেও তার মধ্যে সালাতের অভ্যাস না
হওয়াটা আমাদেরই প্যারেন্টিং এর ব্যর্থতা।
ভালো হয় বাচ্চাকে নিয়ে
নামায শুরু করার আগে ঘরের দরজা আটকিয়ে নিয়ে নামায শুরু করা। যাতে করে সে
অন্য ঘরে চলে যেতে না পারে এবং নামায না পড়লেও মাকে নামায পড়তে দেখে। আশা
করা যায় দেখতে দেখতে একসময় তার মাঝে নামায পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়ে যাবে।
♦কুরআন এর সেসব আয়াত বাচ্চাকে অর্থ সহ তিলাওয়াত করে শুনানো যেগুলোতে আল্লাহ সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন।
♦ সালাত না পড়ার শাস্তি বিষয়ক যে হাদিস গুলো আছে বাচ্চাকে সেগুলো শুনানো।
♦সারাদিনের
মধ্যে বাচ্চাকে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা সময় দেয়া যেই সময়ে সে তার যা ইচ্ছা
করতে পারবে যেমন- লাফালাফি, দৌড়ঝাঁপ, আকাআকি( হারাম কাজ ছাড়া)। এর পর ৩০
মিনিট সময় আলাদা করে রাখা বাচ্চাকে কুরআন, হাদিস শোনানোর জন্যে। বাচ্চার
সাথে এমন কথা বলা যেতে পারে যে "মামনি/ বাবা তুমি বিকাল ৪-৫ টা পর্যন্ত
তোমার যা ইচ্ছা খেলা করবে মামনি তোমাকে বকবো না। তবে খেলার সময় তুমি এমন
কিছু করতে পারবেনা যেটাতে অন্যরা কষ্ট পাবে বা হারাম কোন কাজ হবে। খেলা শেষ
হবার পর তুমি একটু বিশ্রাম নেবে তারপর আমরা নাস্তা করে আল্লাহ আর তার
রাসুলের কথা পড়ব ইন শা আল্লাহ। ঠিক আছে আমার কলিজার টুকরা??"
এক্ষেত্রে এটা মাথায় রাখতে হবে যে বাচ্চা প্রথম কিছুদিন বেশ অনাগ্রহী থাকতে
পারে কুরআন/ হাদিস শোনার ক্ষেত্রে। কিন্তু পিতামাতাকে ধৈর্য সহকারে
শোনানোটা চালিয়ে যেতে হবে। ছোট ছোট গল্পের মাধ্যমে বললে বাচ্চারা অনেক বেশি
আকৃষ্ট হবে ইন শা আল্লাহ।
♦নামায
শেষ করে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আল্লাহর কাছে দুয়া করা( এমন স্বরে বাচ্চা যাতে
শুনতে পায়)। বাচ্চাকে শুনিয়ে শুনিয়ে এমন দুয়া ও করা যেতে পারে যে "
আল্লাহ তুমি আমার বাবুর গাড়িটা খুঁজে দাও,ওর গাড়ির চাকা ভেংগে গিয়েছে, তুমি
ঠিক করে দাও ইতাদি। যাতে বাচ্চা বুঝতে পারে যে নিজের সব প্রয়োজন আল্লাহকেই
বলতে হয়। আর তার জন্যে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে।তিনি যা করতে বলেছেন তা
করতে হবে, যা নিষেধ করেছেন তা করা যাবেনা।
♦বাচ্চাকে
সুন্দর পাঞ্জাবি, পায়জামা, হিজাব, স্কার্ট, জায়নামায কিনে দেয়া ও বলে
দেয়া যে এই গুলো পড়ে নামায পড়লে আল্লাহ অনেক খুশি হবেন কেননা আল্লাহ কুরআনে
বলেছেন সুসজ্জিত হয়ে নামায পড়তে।
♦
♦
♦ অনেকেই ভাবতে পারেন আমি সালাত না পড়লে বাচ্চাদেরকে মারধর করার বিরোধী( নাউজুবিল্লাহ)।
আমাদের রাসুল(সা:) বলেছেন ৭ বছর থেকে বাচ্চাদেরকে নামাযের জন্যে তাগিদ
দিতে এবং ১০ বছর হলে নামায না পড়লে প্রহার করতে। আমি তার আদেশের বিরোধী
হতে বলছিনা। বরং আমি ফোকাস করছি এই বিষয়ে যে "Prevention is better than
cure"
আমার বাচ্চা নামায পড়তে চাইছেনা এই ব্যাপারটা যেন না ঘটে
সেজন্যে আমাদেরকে একদম কচি বয়স থেকে বাচ্চাদের মাঝে সালাতের অভ্যাস তৈরির
সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। নিজেদেরকে আমল করতে হবে।
আশা করছি উপরে
উল্লেখিত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে ইন শা আল্লাহ খুব ছোটবেলা থেকেই বাচ্চা
নামাযের ব্যাপারে যত্নশীল হবে। আল্লাহ আমাদের সবার সন্তানদেরকে আমাদের
চক্ষু শীতলতাকারি হিসেবে ও জান্নাতে যাওয়ার ওসিলা হিসেবে কবুল করুন। আমিন
(বি:দ্র: আমি এখানে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও পারিপার্শ্বিকতা থেকে
প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার আলোকে নোট টা লিখেছি। আমার এই লেখায় কোন পয়েন্ট ভুল মনে
হলে বা কোন সাজেশন থাকলে সেটা আমাকে জানাতে পারেন। ইন শা আল্লাহ ভুলগুলো
পরিমার্জিত করে পোষ্ট করা হবে। এই নোট এর ভালো অংশটুকু আল্লাহর তরফ থেকে।
আর যা কিছু ভুল ভ্রান্তি সেটা আমার অজ্ঞতা ও শয়তান এর তরফ থেকে। তাই সবার
কাছে অনুরোধ অন্ধভাবে এটি ফলো না করে যাচাই করে নেয়ার।)
আল্লাহ আমাদের সন্তানদেরকে সিরাতুল মুস্তাকিম এ অটল রাখুন এবং তাদেরকে আমাদের জন্যে সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
No comments:
Post a Comment