প্রতিটি শিশুর জীবনে দুই থেকে ছয় বছর বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
কারণ এ বয়সটা শিশুর বাড়ন্ত সময়। এ বয়সে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির সাথে সাথে
মানসিক বৃদ্ধিও ঘটে দ্রুত।
অপরদিকে এই বয়সে শিশুরা চঞ্চলতা, দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলা ও পড়াশোনার জন্য
প্রচুর শক্তি খরচ করে। ফলে ক্যালরির প্রয়োজনও পড়ে বেশি। তাই বাড়ন্ত শিশুর
জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাড়ন্ত শিশুর খাবার
সম্পর্কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রফিকুল ইসলাম
বলেন, বাড়ন্ত বয়সে শিশুর দৈনিক কর্মশক্তি বাড়াতে এবং পর্যাপ্ত শারীরিক ও
মানসিক বৃদ্ধি ঘটাতে প্রয়োজন শর্করাসমৃদ্ধ খাবার। যা খুব সহজেই পাওয়া যাবে
চাল, গম, আলুতে। তাই প্রতিদিন শিশুর খাদ্য তালিকায় ভাত, রুটি ও আলুর তৈরি
খাবার রাখুন।
শিশুর মজবুত দাঁত ও শক্ত হাড় গঠনে বেছে নিন দুধ ও দুধ জাতীয় খাদ্য, ডিম,
তিল, মাখন, চর্বিযুক্ত মাছ, শালগম, সরিষা শাকসহ নানা রকম সবুজ শাকসবজি।
এগুলো শিশুর শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করবে। একই সাথে
শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি, মাংসপেশি গঠন এবং রোগ-প্রতিরোধ করতে ও মস্তিষ্কের
গঠনে শিশুর জন্য বেছে নিন প্রোটিন ও আয়োডিন যুক্ত খাবার। শিশুর জন্য
পর্যাপ্ত প্রোটিন ও আয়োডিনের চাহিদা পূরণ করতে দুধ, ডাল, ডিম, মাংস, পনির
ছাড়াও শিশুকে খেতে দিন সামুদ্রিক মাছ।
তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার যেমন—ঘি, মাখনও শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
কারণ এসব খাবার শিশুর শরীরে স্নায়ু টিস্যু তৈরি করে এবং শরীরের ভেতর থেকে
তাপ বের হতে বাধা দেয়। একই সাথে বাড়ন্ত শিশুর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়
রাখতে হবে নানা রকম সবুজ শাকসবজি ও মৌসুমি ফল। কারণ এগুলো শিশুর শরীরে
ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে এবং বিভিন্ন হরমোন ও লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে
সাহায্য করে।
বাড়ন্ত বয়সে শিশুদের খাবারের প্রতি অনীহা থাকে বেশি। তাই এ সময় শিশুদের
একই ধরনের খাবার বারবার দিলে তাদের খাবারের প্রতি আরও বেশি অনীহা তৈরি হয়।
তবে তাই বলে তো আর খাবার থেকে শিশুকে দূরে রাখা যাবেন না। তাই শিশুকে ভাত,
মাছ, সবজি, ফল, ডিম, দুধ সবই খেতে দিন।
তবে খাবার তৈরিতে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করুন। যেমন শিশুকে প্রতিদিন ডিম,
রুটি না দিয়ে মাঝেমধ্যে রুটির সাথে ভাজি, কলিজা ভুনা, মুরগির স্যুপ দিতে
পারেন। আবার ডিমের বদলে ডিমের তৈরি পুডিং, ডিম চাপ দিতে পারেন। ফল, দুধে
একঘেয়েমি চলে এলে মাঝে মধ্যে কাস্টার্ড, পায়েস, ফ্রুটস কেক, হালুয়া, মিল্ক
শেক, জুস বানিয়ে দিন। যা শিশু বেশ আগ্রহ সহকারে খাবে। বেশির ভাগ শিশুর সবজি
খাওয়ার প্রতি অনীহা থাকে বেশি। তাই চেষ্টা করুন নানা রকম সবজিকে শিশুর
সামনে একেক সময় একেকভাবে উপস্থাপন করতে।
আর এক্ষেত্রে নানা রকম সবজির মিশ্রণে খিচুড়ি বেশ পুষ্টিকর। কারণ এই এক
খাবারেই শিশু পেয়ে যাবে নানা রকম পুষ্টি উপাদান। তাই মাঝেমাধ্যে শিশুকে
খিচুড়ি খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়া তৈরি করে দিতে পারেন সবজির পাকোড়া,
স্যুপ, কাটলেট, রোল প্রভৃতি। তেমনি মাংসের স্বাদে ভিন্নতা আনতে চাইলে তৈরি
করে দিতে পারেন কাবাব, রোল, কোপ্তা, মাংসের স্যান্ডউইচ। এই বয়সী শিশুদের
স্কুলের টিফিনে ভিন্নতা আনা উচিত। তা না হলে শিশু টিফিন খেতে চাইবে না। তবে
তাই বলে দোকানের কেনা খাবার দেওয়া উচিত নয়।
বরং খুব সহজেই বানিয়ে দিতে পারেন স্যান্ডউইচ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কাটলেট,
সবজি বল, নুডুলস প্রভৃতি। একই সাথে শিশুকে যতটা সম্ভব দোকানের কেনা
ফাস্টফুড, নানা রকম খাবার ও জুস থেকে দূরে রাখুন। কারণ এগুলো শিশুর শরীরে
নানা রকম ক্ষতি করার পাশাপাশি শিশুর ঘরের খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি করে।
No comments:
Post a Comment