শিশুর খাবারে স্বাদ বাড়ানোর কিছু উপায়

ছয়
মাস থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত সময়টা শিশুদের জন্য খুবই সংবেদনশীল। এই বয়সে
মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে অন্যান্য সম্পূরক খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু
সম্পূরক খাবারে স্বাদের ভিন্নতা না থাকায় একই রকম খাবার খেতে শিশুর অরুচি
আসে। শিশুর হজমে সমস্যা হতে পারে, এ জন্য এই বয়সী শিশুদের খাবারে খুব একটা
নতুনত্ব আনা যায় না। তবে স্বাদে ভিন্নতা আনতে অবশ্যই হালকা কিছু যোগ করা
যেতে পারে। বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের
প্রধান অধ্যাপক সাজেদা আক্তার একটু ব্যাখ্যা করলেন। প্রথম দিকে, অর্থাৎ ছয়
থেকে আট-নয় মাস পর্যন্ত কম আঁঁশযুক্ত খাবারই শিশুর জন্য বেশি উপযোগী।
এরপরে ধীরে ধীরে আঁঁশযুক্ত খাবারের সঙ্গে অভ্যস্ত করে নেওয়া ভালো। এতে করে
খাবার হজমে কোনো রকম সমস্যা দেখা দেবে না। এ ছাড়া বাচ্চারা যেহেতু পানি
তেমন একটা পান করে না, তাই বুকের দুধের পাশাপাশি অর্ধতরল খাবার বেশি
খাওয়ানো হয়। এতে শিশুর পেট বেশি সময় ভরা থাকে। সেই সঙ্গে শিশু সব ধরণের
পুষ্টি উপাদানও পেয়ে থাকে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দুধ-ডিম
উপকরণ: দুধ এক কাপ, ডিম ১টি (দেশি মুরগির হতে হবে), লবণ পরিমাণমতো, চিনি আধা চা-চামচ, ভ্যানিলা এসেন্স ১ থেকে ২ ফোঁটা ও ডালিমের রস।
প্রণালি:
দুধ ভালো করে জাল দিতে হবে। এবার ফুটন্ত দুধে ডিম ছেড়ে ভালো করে ঘুঁটে
নিতে হবে। এরপর এর সঙ্গে এক বা দুই ফোঁটা ভ্যানিলা এসেন্স মেশাতে হবে।
সবশেষে ডালিমের রস ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে খাবারটি দেখতে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
ডালিমের রসের পরিবর্তে ফুড কালার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা অবশ্যই
অনুমোদিত হতে হবে।
[ছয় মাস থেকে দুই বছরের বাচ্চদের জন্য]
পিশপাশ
উপকরণ:
পোলাও চাল ২ টেবিল চামচ, শাকপাতা (পালং/পুঁই) ১টা বা ২টা, মিষ্টিকুমড়া ১
টুকরো, আলু মাঝারি আকৃতির চার ভাগের এক ভাগ, মৌসুমি সবজি ১ টুকরো (কিউব
আকৃতির), স্বাদ বাড়ানোর জন্য লেবু, লবণ ও ঘি।
প্রণালি: প্রথমেই সবজিগুলো
সেদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর এক থেকে দেড় কাপ পানিতে পোলাও চাল আর ডাল সেদ্ধ
করতে হবে। চাল সেদ্ধ হয়ে গেলে ঘুঁটনি দিয়ে ভালো করে ঘুঁটে নিতে হবে। এরপর
মিষ্টিকুমড়া, আলু, মৌসুিম সবজি, শাকপাতা সব একত্রে চটকে নিতে হবে। চটকানো
সবজিগুলো চুলোয় সেদ্ধ করা পোলাও চালের সঙ্গে দিয়ে দিতে হবে। আরও একবার
ঘুঁটনি দিয়ে ভালো করে ঘুঁটে নিন। রান্না হয়ে গেলে চার ভাগের এক চা-চামচ ঘি
ওপর দিয়ে দিন। খেয়াল রাখতে হবে, খাবারটি যেন বেশি তরল বা বেশি ঘন না হয়।
সেমি-সলিড হবে। খাওয়ানোর আগে হালকা লেবুর রস দিয়ে দিলে খাবারে ভিন্ন স্বাদ
আসবে।
[ছয় থেকে আট মাসের শিশুকে প্রতিদিন ১ থেকে ২ চামচ খাওয়ানো যেতে পারে। এক বছরের শিশুদের জন্য বেশি উপযোগী]
ভাতের মাড়ে মাছ
উপকরণ: ভাতের মাড় এক কাপ, লেবুর রস আধা চা-চামচ, আলু চার ভাগের এক ভাগ, শিং মাছ এক টুকরো।
ভাতের মাড়ে মাছপ্রণালি: প্রথমেই সামান্য লবণ দিয়ে আলু ও এক টুকরো শিং
মাছ সেদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর সেদ্ধ আলুর চার ভাগের দুই ভাগ চটকে নিন।
মাছের কাঁটা বেছে ভালো করে চটকানো আলু মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে এক চামচ পরিমাণ
চটকানো শিং মাছ মিশিয়ে সঙ্গে পরিমাণমতো লেবুর রস দিয়ে ভালো করে নেড়ে নিন।
[ছয় মাসের বাচ্চার জন্য উপযোগী খাবার]
ফিরনি
উপকরণ: দুধ আধা লিটার, চিনি ২ বা ৩ টেবিল চামচ, পোলাও চাল ৫০ গ্রাম, এলাচি ১টা, দারুচিনি ১ টুকরো ও কিশমিশ পরিমাণমতো।
প্রণালি: পোলাও চাল আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর চাল আধা বাটা করে
নিতে হবে। এলাচি, দারুচিনি ও কিশমিশ দিয়ে দুধ জাল দিয়ে এর মধ্যে আধা বাটা
চাল দিয়ে এমনভাবে নাড়তে হবে, যাতে চাল চাকা চাকা না হয়। একটু ঘন হয়ে এলে
নামিয়ে একটি বাটিতে ঢেলে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।
[এক-দুই বছরের বাচ্চাদের জন্য]
বানানা পুড়িং
উপকরণ: দুধ ১ লিটার, ডিম ৩টি, কলা ১টি, চিনি ৩ টেবিল চামচ + ২ টেবিল চামচ।
পুড়িংপ্রণালি:
১ লিটার দুধ ফুটিয়ে আধা লিটার করতে হবে। এবার দুধটুকু ঠান্ডা করে নিন।
একটি প্যানে ২ টেবিল চামচ চিনি ও ১ টেবিল চামচ পানি যোগ করে মাঝারি তাপে
ক্যারামেল তৈরি করুন। ক্যারামেল তৈরি হলে চুলা থেকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যে
পাত্রে পুডিং তৈরি করবেন (বেকিং প্যান), সে পাত্রে ক্যারামেল ঢেলে দিন।
এরপর ক্যারামেল এক পাশে ঠান্ডা করতে দিন। এবার ব্লেন্ডারে ডিম, চিনি, কলা ও
দুধ দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করুন। (মিশ্রণ তৈরি করতে হ্যান্ড মিক্সচারও
ব্যবহার করতে পারেন)। এরপর মিশ্রণটি ক্যারামেল করে রাখা পাত্রে ঢেলে দিন।
এখন পুডিং প্যানের চেয়ে বড় একটি প্যান নিন। এতে ফুটন্ত পানি নিন (প্যানে
ততটুকু পরিমাণ পানি নিন যতটুকু পানির মাঝে আপনার পুডিং প্যানটি বসালে
প্যানটির অর্ধেক অংশ পানিতে ডুবে থাকবে এবং প্যান পানিতে ভাসবে না)। এখন
পুডিং প্যানটি বড় প্যানে বসিয়ে দুটি প্যানই ঢেকে দিন এবং ওভেনে ৪৫-৬০
মিনিটের মতো বেক করুন।
[পুডিং এক-দুই বছরের বাচ্চাদের জন্য]
No comments:
Post a Comment