মা-বাবা মাত্রই তার সন্তানকে ভালোভাবে গড়ে তুলতে চান। ছোটবেলা থেকেই নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস আপনার শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। তবে এটাও খেয়াল রাখবেন নিয়ম শেখানো বা মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে শিশুকে কোনভাবেই ধমক বা শাস্তি নয়। বাবা মায়ের কথায় ও কাজের মধ্য দিয়ে নিয়ম পালনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে শাসন করলেও সেটা যেনো হয় পরিমিত। শাসন যদি হয় কড়া তবে আপনার সন্তান আপনার দেওয়া শাস্তির ভয়েই নিয়ম মেনে চলবে কিন্তু সেটা নিতান্তই ভয়ে, নিয়মের প্রতি সে শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবে না।
- শিশুদের আত্মসম্মানবোধ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই সন্তান যতই ছোট হোক না কেন তাকে সম্মান করুন, তার মতামত মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ওর আবদার বা কথা না রাখার মতো হলে তা তাকে বুঝিয়ে বলুন কেন সম্ভব নয়। তাকে তার আবদারের জন্য ধমকা ধমকি করলে সে এটা ভেবে বড় হবে যে, আপনি তার কথার কোনো গুরুত্ব দেন না। এতে করে সে অন্যের কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনার বা পরমতসহিষ্ণু হওয়ার বিষয়টি শিখবে না।
- শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। মনে রাখবেন ওরা বাবা মাকেই বেশি অনুকরণ করে। আপনি তাকে যা করতে বলছেন সেটা আপনি নিজেও মেনে চলুন। আপনি যদি ঘুম থেকে দেরিতে উঠেন, অসময়ে টিভি দেখেন তাহলে আপনার সন্তানও সময়মত পড়তে বসতে বা ঘুম থেকে উঠতে চাইবে না। আপনি সময়ের কাজ সময়ে করলে আপনার সন্তানও তাই করবে।
- রেগে গেলে শিশুর সঙ্গে কখনোই খারাপ শব্দ প্রয়োগ করে বা গালি দিয়ে ওকে শাসন করবেন না। এমন করলে আপনার সন্তানের মধ্যে উগ্র মেজাজের বৈশিষ্ট্য তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- তার কাজ অন্য কারো কাজের সঙ্গে তুলনা করবেন না। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস কমে যায়।
- আমাদের সমাজে প্রচলিত একটা ধারণা আছে, যে বাবা-মা একসাথে শাসন করতে নেই। একজন শাসন করলে আরেকজন টেনে নিয়ে আদর করবে। প্রচলিত এই ধারনা থেকে বেরিয়ে আসুন। এমন আচরণে শিশুর মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়। সে বুঝতে পারে না আসলে তার কোনো ভুল বা অন্যায় হয়েছে কিনা। তাই ভুল করলে মা বাবা দুজনেই বোঝাবেন ভুলটা ভুলই।
- একেক শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একেক রকম। তাই আপনার শিশু কখন পড়তে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, তার শখ কি, কোন খেলা তার পছন্দ সেগুলি মাথায় রেখে দিনের রুটিন তৈরি করুন। রুটিন তৈরিতে বাচ্চার মতামত নিন।
- শিশুর উপর নিয়ম জোর করে চাপিয়ে দিবেন না। তাকে বুঝিয়ে বলুন কেন এই নিয়মটা মেনে চলা উচিত।
- কথা না শুনলে বা কোনো অন্যায় করলে প্রথমে তাকে বুঝিয়ে বলুন, তারপরও না শুনলে ওয়ার্নিং দিন। এরপরও আবার একই কাজ করলে তার সঙ্গে কথা বলা, গল্প করা কমিয়ে দিন, তার পছন্দের জিনিস দেওয়া বন্ধ করে দিন। কিন্তু কোনোভাবেই হাত তোলা ঠিক নয়।
- পরিবারের অন্য কারো সামনে শিশুর সমালোচনা বা দোষ ত্রুটি বলবেন না। এমন করা হলে শিশুর আত্মবিশ্বাস কমে যায়, সে হীনমন্যতায় ভুগবে।
- সন্তানকে সময় দিন। মাঝে মাঝে তার খেলায় অংশ নিন, গল্প করুন। শিশুরা এতে খুব খুশি হয়, ফলে সন্তানের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে।
- এটাও মনে রাখতে হবে, শিশুরা একটু দুষ্টামি করবেই। নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখাতে গিয়ে যেন তার স্বাভাবিক বিকাশে বাধা না পড়ে। ছুটির দিনগুলোতে তার ইচ্ছামতো তাকে সময় কাটাতে দিন। পরিবারই যেকোনো শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান। আপনার সন্তান যখন পরিবারের ভেতরেই নিয়ম মেনে বেড়ে উঠবে তখন সে বিদ্যালয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের নিয়ম-শৃঙ্খলা স্বভাবগতভাবেই মেনে চলবে।
No comments:
Post a Comment