Sunday, October 23, 2016

শিশুর প্রারম্ভিক শৈশব ও তার গুরুত্ব


মানব জীবনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে। তাই গর্ভাবস্থা থেকে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে শিশুর 'প্রারম্ভিক শৈশবকাল' বলা হয় (সূত্র : ঊঈঈউ চড়ষরপু ২০১৩, বাংলাদেশ) একটি শিশু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের ব্যবহার, বুদ্ধি, ভাষা, চিন্তা, বোধশক্তি, অনুভূতি ও ভাবের আদান-প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করে। বয়সের সঙ্গে কার্যক্ষমতার এই পরিবর্তনকেই বিকাশ বলে। আর বৃদ্ধি অর্থ শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গের আকার বড় বা পরিবর্তন হওয়া বা ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।

শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বৃদ্ধির জন্য মুখ্যত প্রয়োজন পর্যাপ্ত পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা এবং বিকাশের জন্য পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ন (রহঃবৎধপঃরাব পধৎব) ও শেখনের সুযোগ। শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য বয়স অনুসারে প্রদান চাহিদাগুলো পূরণের মাধ্যমে একটি শিশুর পরিপূর্ণ/সার্বিক বিকাশ (ঐড়ষরংঃবব উবাবষড়ঢ়সবহঃ) ঘটানো সম্ভব।
গর্ভাবস্থা থেকে জীবনের প্রথম ১০০০ দিন শিশুর বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিকাশের মূলকেন্দ্র হলো মস্তিষ্ক বা ব্রেন। গর্ভাবস্থায় পুষ্টি, যত্ন, মাকে হাসিখুশি রাখা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ ও নির্যাতন প্রতিরোধের মাধ্যমে গর্ভের শিশুটির ব্রেন ডেভেলপমেন্ট নিশ্চিত করা যায়। গর্ভে থাকা অবস্থায়ই মস্তিষ্কের কোষ তৈরি হয়। জন্মের পর মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর সংযোগ তৈরির মাধ্যমে বিকাশ ঘটতে থাকে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে প্রথম ৩ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর মস্তিষ্কের ৮৫% এবং ৫ বছর বয়সের মধ্যে প্রায় ১০০% সংযোগ স্থাপিত হয়। মস্তিষ্কের কোষের সংযোগ আপনা-আপনি বাড়ে না। তার জন্য কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত করা প্রয়োজন। কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে যত বেশি সংযোগ তৈরি হয় ততই একটি শিশুর বিকাশের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলো পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হবে_ সে হয়ে উঠবে বুদ্ধিমান, মেধাবী।
কিভাবে শিশুর বিকাশের মজবুত ভিত রচনা করবেন?
_সঠিক পুষ্টি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বয়স অনুসারে শিশুর প্রতি কর্মে/ইশারায় সাড়া দেয়া। যেমন_ বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা শিশুর সঙ্গে গুন গুন করে গান গাওয়া, স্পষ্ট করা, চোখে চোখে তাকানো ইত্যাদি।
_ছোট শিশু তার আনন্দ, দুঃখ প্রকাশ করলে তার প্রতি মনযোগ দিয়ে সাড়া দেয়া।
_শিশুর সঙ্গে খেলা করা, গান, ছড়া, গল্প বলা ইত্যাদি।
এই ধরনের উদ্দীপনামূলক কাজের মাধ্যমে তার মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষের মধ্যে অনেক সংযোগ তৈরি হয়। শিশুর জীবনের প্রথম ৮ বছরের মধ্যে সংযোগ তৈরির সুযোগগুলো ব্যবহার না করলে পরে এগুলো স্থায়ী হয় না। তাই গর্ভাবস্থা থেকে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য মা-বাবা ও পরিবারের সবারই সচেতন হতে হবে।

No comments:

Post a Comment